সময়, আপেক্ষিক তত্ত্ব, টাইম ডাইলেশন এবং কোরআন

পবিত্র কোরআনের সূরা হাজ্জ্বের ৪৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে–
তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। অথচ আল্লাহ কখনও তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। আপনার পালনকর্তার কাছে একদিন তোমাদের গণনার এক হাজার বছরের সমান। [সূরা হাজ্জ ২২ : ৪৭]
আমরা যদি উপরের আয়াতটিকে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব এখানে সময়ের হিসাবের ভিন্নতা বা আপেক্ষিকতার কথা বলা হচ্ছে। “আপনার পালনকর্তার কাছে একদিন তোমাদের গণনার এক হাজার বছরের সমান।” অর্থাৎ আমাদের কাছে যে সময়টি এক হাজার বছরের সমান, মহান আল্লাহর কাছে সেই একই সময়ের ব্যাপ্তি মাত্র ১ দিনের সমান। 
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সময়ের হিসাব কি একেক জনের একেক রকম হতে পারে? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হচ্ছে- হ্যাঁ সময় আসলে আপেক্ষিক । একটা সময় পর্যন্ত ধারণা ছিল মহাবিশ্বের সব জায়গাতেই আর সব অবস্থাতেই সময়ের মান সমান। অর্থাৎ ঘড়ির এক সেকেন্ড বা এক মিনিটের মান সব অবস্থাতেই সমান থাকবে।
কিন্তু ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন এই ধারণাকে পাল্টে দিলেন। তিনি বললেন, না- সময় আসলে আপেক্ষিক। এবং একেকজনের জন্য সময়ের হিসাব একেক রকম। এবং এটি নির্ভর করে অবস্থান, গতি ইত্যাদির উপর। অর্থাৎ দুজন আলাদা ব্যাক্তির ক্ষেত্রে  সময়ের হিসাব আলাদা আলাদা হবে যদি তাদের অবস্থান, গতি ইত্যাদি আলাদা হয়। যেমন , একজন যদি খুব দ্রুত গতিতে রকেটে ছুটতে থাকে, আর অন্যজন পৃথিবীতে স্থির থাকে, তাহলে খুব দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকা ব্যাক্তির জন্য, পৃথিবীর সাপেক্ষে সময় ধীরে চলবে। অন্যদিকে পৃথিবীতে স্থির থাকা ব্যাক্তির জন্য রকেটে ছুটতে থাকা ব্যাক্তির তুলনায় সময় দ্রুত চলবে। যে যত দ্রত গতিতে ছুটতে পারবে তার ঘড়ি অন্যদের তুলনাত তত ধীরে চলবে।
সময়ের হিসাবের এই ভিন্নতাকেই বলা হয়ে Relativity of Time বা সময়ের আপেক্ষিকতা।
ঠিক একইভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও সময়ের হিসাবকে পাল্টে দিতে পারে। পৃথিবীর সাপেক্ষে কোন গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যদি ৫ গুন বেশী হয়, তাহলে সেই গ্রহের সময় পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৫ গুণ ধীরে চলবে।
আবার, দু’জন ব্যাক্তির একজন যদি চাঁদে অবস্থান করেন, আর আরেকজন পৃথিবীতে, তবে চাঁদে যিনি আছেন তার ঘড়ি পৃথিবীতে থাকা ব্যাক্তির চাইতে দ্রুত চলবে। কারন, চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ বল পৃথিবীর চাইতে কম। মাধ্যাকর্ষণ বল সময়ের হিসাবকে পরিবর্তন করতে পারে এবং যে যত শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ বলের কাছাকাছি থাকবে তার ঘড়ি তত ধীরে চলবে। এই ব্যাপারটিকে বিজ্ঞানে ভাষায় বলা হয় Gravitational time dilation।
সময়ের আপেক্ষিকতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আইনস্টাইনের Theory of relativity তে ১৯০৫ সালে। এর আগে সময়ের আপেক্ষিকতা নিয়ে মানুষের তেমন ধারনা ছিল না।
মজার ব্যাপার হচ্ছে সময়ের হিসাব যে আপেক্ষিক সে কথাটিই কিন্তু পবিত্র কোরআনের সূরা হাজ্জ ২২ : ৪৭ আয়াতে  বলা হয়েছে।
তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। অথচ আল্লাহ কখনও তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। আপনার পালনকর্তার কাছে একদিন তোমাদের গণনার এক হাজার বছরের সমান। 
[সূরা হাজ্জ ২২ : ৪৭]
আর মজার ব্যাপার হচ্ছে সময়ের হিসাবের ভিন্নতার কথাই আইনস্টাইনের Theory of relativity  তে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিজ্ঞানের এই আধুনিক ধারনার সাথে কোরআনের আয়াত মিলে যাবার ব্যাপারটা সত্যিই অবাক হবার মত!
কিভাবে এবং কেন সময় একেক অবস্থায় একেক রকম হয় তার কিছুটা ব্যাক্ষ্যা করা হয়েছে নীচের ভিডিওতে। কৌতুহলী পাঠকের জন্য আশা করি ভাল লাগবে–

One thought on “সময়, আপেক্ষিক তত্ত্ব, টাইম ডাইলেশন এবং কোরআন

  1. ধন্যবাদ, খুব সুন্দর তথ্য দেয়ার জন্য৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »