পুরুষের শরীরে দুইটি হৃদয় থাকতে পারে না

পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ৪ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে-

আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেন নি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন। [ সুরা আহযাব ৩৩:৪ ]পুরুষের শরীরে দুইটি হৃদয় থাকতে পারে না

Allah has not made for a man two hearts in his interior. [ Ahzab 33:4]  

এই আয়াতটি বেশ রহস্যময়। কারণ আল্লাহ বলছেন তিনি কোন মানুষের শরীরের মধ্যে দুইটি হৃদয় স্থাপন করেননি, এবং এ কথাটি বলতে গিয়ে لِرَجُلٍ  শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে পুরুষ মানুষ (man)। قَلْبَيْنِ  শব্দের অর্থ দুইটি হৃদয় বা দুইটি হৃদপিণ্ড। অর্থাৎ আল্লাহ কোন পুরুষ মানুষের মধ্যে দুইটি হৃদয় বা হার্ট স্থাপন করেননি। দেখা যাচ্ছে এই আয়াতে মহিলা বা স্ত্রীদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে । শুধুমাত্র পুরুষ মানুষের কথা বলা হয়েছে । তার মানে কি একজন স্ত্রী বা মহিলার শরীরে দুইটি হৃদয় থাকতে পারে? তার উত্তর হচ্ছে- হ্যাঁ, একজন স্ত্রীর শরীরে দুইটি হৃদয় বা হার্ট থাকতে পারে, যখন তিনি প্রেগন্যান্ট বা গর্ভাধারণ করেন। তার নিজের হার্ট এবং তার জরায়ূতে থাকা সন্তানের হার্ট । কিন্তু একজনের পুরুষের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটা কখনই সম্ভব নয়। আল্লাহ চাইলে ‘আল-ইনসান’ টার্ম ব্যবহার করতে পারতেন, যার অর্থ মানুষ, যে স্ত্রী অথবা পুরুষ যে কেউ হতে পারে। কিন্ত আল-কোরআনর পুরুষবাচক টার্ম ব্যবহার করেছে, কারন একজন স্ত্রীর শরীরে দুইটা হার্ট থাকা সম্ভব। আল-কোরআন সূক্ষ্মভাবে এই আয়াতে স্ত্রীর বদলে পুরুষ বাচক শব্দ (لِرَجُلٍ)  ব্যবহার করেছে , ব্যাপারট সত্যিই অবাক হবাক মত। পুরুষের শরীরে দুইটি হৃদয় থাকতে পারে ন

পুরুষের শরীরে দুইটি হৃদয় থাকতে পারে না

এই আয়াতে আরো দুটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে ‘যিহার’ করা। যিহার হচ্ছে তখনকার আরব সমাজে প্রচলিত একটি বিধান, যেখানে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেবার জন্য স্ত্রীর কোন অঙ্গকে মায়ের পিঠ বা মায়ের অন্য কোন অঙ্গের সাথে তুলনা করত। স্বামী তার স্ত্রীকে বলত, ‘তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পৃষ্ঠতুল্য’। ‘কাজেই তুমি আমার জন্য হারাম’। কিন্তু মহান আল্লাহ বলেছেন এ ধরনের কোন কথার দ্বারা স্ত্রী কখনই মায়ের মত হয়ে যাবে না। মা কেবল তিনিই যিনি গর্ভে ধারণ করেছেন।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে কাউকে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করা। কোন ব্যক্তি কাউকে পালক পুত্র বানিয়ে নিলে সে তার প্রকৃত পুত্র হয়ে যায় না। বরং সে যার পুত্র তারই থাকে, একজন সন্তানের দুইজন বাবা হতে পারে না।

খেয়াল করলে দেখা যাবে এই দুটি বিষয়ই একজন স্ত্রী লোকের গর্ভাধারণের সাথে সম্পর্কিত। যিনি গর্ভাধারণ করেন কেবল তিনিই প্রকৃত মা, আবার যার ঔরসে সন্তান জন্ম নেয়, তিনিই প্রকৃত বাবা। একজন স্ত্রীলোক যখন গর্ভধারণ করেন তখন তার শরীরে দুইটি হৃদয় থাকে, এবং তাঁর গর্ভের সন্তানের তিনি মা হন এবং পিতা এই সন্তানের বাবা হন। একজন পুরুষের শরীরে যেমন দুইটি হৃদয় থাকতে পারে না, ঠিক তেমনি স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করলে বা কাউকে পালক সন্তান হিসেবে গ্রহণ করলে তারা সত্যিকার অর্থে মা বা সন্তান হতে পারে না। 

কোরআনের এই আয়াতে মানুষের মূল জেনেটিক সম্পর্কের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এই বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে বলা হয়েছে- পুরুষ মানুষ যেহেতু গর্ভাধারণ করে না তাই তার দুইটি হৃদয়ও থাকতে পারে না। এভাবে তুলনা করাটা নান্দনিক আর বিস্ময়কর।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »