কুরআনে ব্ল্যাকহোল

فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ

وَإِنَّهُ لَقَسَمٌ لَّوْ تَعْلَمُونَ عَظِيمٌ

অতএব, আমি তারকারাজির অস্তাচলের শপথ করছি,

নিশ্চয় এটা এক মহা শপথ-যদি তোমরা জানতে।

I swear by the setting (or falling or fading) of stars;

And indeed, it is a mighty oath – if you could know. Surah Waqiah 56:75-76

পবিত্র কোরআনের সূরা আল-ওয়াক্কিয়ার ৭৫ এবং ৭৬ নাম্বার আয়াতে নক্ষত্রের অস্তাচলের শপথ করা হয়েছে, এবং বলা হয়েছে যে এই শপথটি একটি মহা শপথ। মহান আল্লাহ কোরআনে অনেক ক্ষেত্রেই শপথ করেছেন- যেমনঃ চাঁদ, সুর্য্য, রাত, দিন ইত্যাদি। এখানে একটু ব্যাতিক্রমি শপথ করা হয়ছে। বলা হয়েছে এই শপথটি একটি বড় ধরনের বা মহা শপথ।

আলোচ্য আয়াতে النُّجُوم শব্দের অর্থ তারকা বা নক্ষত্র। নক্ষত্রের সাথে بِمَوَاقِعِ শব্দ যোগ করা হয়েছে । এখানে بِمَ হচ্ছে Preposition যেটি সাধারণত অর্থ হয়  “with” or “by”। আর وَاقِعِ হচ্ছে Noun। এরাবিক ডিকশনারিতে وَاقِعِ শব্দটির অর্থ পতিত হওয়া, উপর থেকে নীচে পড়া, ধ্বংশ হওয়া ইত্যাদি। এই আয়াত দুটিতে এমন একটি শপথ করা হয়েছে যার সাথে নক্ষত্রের ধ্বংশপ্রাপ্ত হওয়া সম্পর্কিত। বলা বাহুল্য মহাকাশে নক্ষত্রের পতন বা ধ্বংশের সাথে যে নামটি জড়িত সেটি হচ্ছে ব্ল্যাকহোল।

নীচে এরাবিক ডিকশনারীতে وَاقِعِ শব্দটির ডিটেইলস অর্থ দেয়া হয়েছে।  এখান থেকে যে কোন পাঠক মাত্রেই আশা করি বুঝতে পারবেন যে কোরআনে ব্যাবহৃত وَاقِعِ শব্দটি আসলে কি বোঝায়–

কোরআনে ব্ল্যাকহোল

কোরআনে ব্ল্যাকহোল

অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি وَاقِعِ শব্দটির  অনুবাদ হিসেবে Fall , Collapse, Crash, Get caught in, Get stuck in শব্দগুলি পাওয়া যাচ্ছে। আর এই শব্দগুলির আগে النُّجُوم শব্দ দিয়ে নক্ষত্রের কথাই বলা হচ্ছে। তারমানে কোরআনে এমন অবস্থার নামে শপথ করা হয়েছে যখন নক্ষত্রের Fall , Collapse, Crash, Get caught in ইত্যাদি পরিণতি ঘটে থাকে। আর যে কোন নক্ষত্রের এ ধরণের পরিণতি ঘটতে পারে তখনই যখন সেটি নিজেই ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণ গহবরের পরিণত হয় অথবা অন্য কোন কৃষ্ণ গহবরের সংস্পর্শে আসে।

আইন্সটাইনের থিওরী অফ জেনারেল রিলেটিভিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে কোন নক্ষত্রের ভর যদি সূর্যের ভরের তিনগুন বা এর বেশী হয় তাহলে এর জ্বালানী শেষ হয়ে যাবার পরে নিজেই নিজের মধ্যে Collapse বা সংকুচিত হয়ে, আকারে ছোট ও অসীম ঘনত্বের ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে। 

নাসার ওয়েবসাইটে এভাবে লিখা হয়েছে- 

If the total mass of the star is large enough (about three times the mass of the Sun), it can be proven theoretically that no force can keep the star from collapsing under the influence of gravity.

ব্ল্যাকহোলে পরিণত হওয়া নক্ষত্রের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতটাই অসীম যে সেখান থেকে শুধু কোন গ্রহ, নক্ষত্র শুধু নয়, বরং আলো পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারে না। ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহবর এমন শক্তিশালী মহাকর্ষ বল তৈরি করে যে এটি তার কাছাকাছি চলে আসা যেকোন বস্তুকে একেবারে টেনে নিয়ে যেতে পারে। হোক সেটা কোন গ্রহ, ধুমকেতু বা স্পেসক্রাফট।

ব্ল্যাকহোলে রয়েছে শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র। প্রত্যেক ব্ল্যাকহোলের চারদিকে একটি সীমা আছে যেখানে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। 

কুরআনে ব্ল্যাকহোল

ছবিঃ ব্ল্যাকহোল নিকটবর্তী আরেকটি নক্ষত্রকে নিজের দিকে টেনে নিচ্ছে।

অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বরের একটি সত্যিকারের ছবি তোলার চেষ্টা করছেন।  ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ব্ল্যাকহোলের প্রথম ছবি প্রকাশ করে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপে কর্মরত বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী থেকে ৫ কোটি ৫০ লাখ আলোকবর্ষ দূরে মেসিয়ার৮৭ গ্যালাক্সির কেন্দ্রের এক সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণগহ্বর এটি। কৃষ্ণগহ্বরটির নাম এম৮৭, যার ভর সূর্যের ভরের সাড়ে ৬০০ কোটি গুণ!

 

কুরআনে ব্ল্যাকহোল
      ছবিঃ মেসিয়ার৮৭ গ্যালাক্সির কেন্দ্রের এক সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণগহ্বর

তারমানে মহাকাশে সত্যিই ব্ল্যাকহোল নামক অসীম শক্তির অস্তিত্ব আছে। এবং পবিত্র কোরআনে وَاقِعِ শব্দটির মাধ্যমে ব্ল্যাকহোলের দিকে ইংগিত করা হয়েছে, আর একে আল্লাহর এক মহা শপথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সূত্রঃ

https://www.almaany.com/en/dict/ar-en/%D9%88%D8%A7%D9%82%D8%B9/

https://science.nasa.gov/astrophysics/focus-areas/black-holes

One thought on “কুরআনে ব্ল্যাকহোল

  1. অসাধারণ লিখেছেন ভাই,,!
    আশা করি এসব বিষয়ে আরো অনেক রিসার্চ করে আমাদের আরো নতুন কিছু উপহার দিবেন,,,!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »