সূরা কাহফ ও ঘুমিয়ে থাকা গুহাবাসী

সূরা কাহফে একদল যুবকের কথা বলা হয়েছে যাদেরকে মহান আল্লাহ ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন। তাদের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা সূরা কাহফের ১১ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে – তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ফেলে দেই। 

فَضَرَبْنَا عَلَى آذَانِهِمْ فِي الْكَهْفِ سِنِينَ عَدَدًا
তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ফেলে দেই। [সুরা কা’হফ – ১৮:১১]

প্রশ্ন হচ্ছে আয়াতে কানে ঘুমের পর্দা ফেলে দেবার কথা মহান আল্লাহ কেন বললেন? এভাবে বললেই তো হত যে, – ‘আমি তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে রাখলাম’
আসলে কুরআনের মধ্যে লুকিয়ে আছে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক আর বিস্ময়কর তথ্য, যা আমাদেরকে মানতে বাধ্য করে যে কুরআন আসলে মানুষের কোন বাণী নয়।

আমরা  যদি ঘুম আর ঘুম থেকে উঠার মেকানিজম দেখি তাহলে দেখব –  আমাদের মস্তিষ্কের Reticular Activating System নামক (যাকে সংক্ষেপে বলে RAS) জটিল নার্ভের নেটওয়ার্ক আছে , যা আমাদের ঘুম আর জাগ্রত অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে।  RAS এর অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক Stimulus যেমন শব্দ, আলো ইত্যাদির তারা প্রভাবিত হয়ে  ইলেকট্রিক ওয়েভের মাধ্যমে ব্রেইনের একটিভিটি বাড়িয়ে দেয়া, যার ফলে আমরা ঘুম থেকে জেগে উঠি। 

সূরা কাহফ ও গুহাবাসির ঘুম

ছবিঃ বিভিন্ন Impulse এর মাধ্যমে Reticular Activating System আমাদেরকে জাগ্রত অবস্থায় রাখে। 

মোটকথা, ঘুম থাকে জাগ্রত হতে হলে Reticular Activating System কে আগে ব্রেইনে সিগন্যাল পাঠাতে হবে। আর Reticular Activating System কে একটিভ বা ক্রিয়াশীল করার জন্য শব্দ (Sound), আলোর (light) প্রয়োজন হবে। 

Reticular Activating System আঘাত বা স্ট্রোকের কারনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হলে মানুষ ‘কমায়’ চলে যায় এবং পারিপার্শ্বিক কোন স্টিমুলাস দিলেও তাকে আর জাগ্রত করা সম্ভব হয় না। 

সূরা কাহফে বর্ণিত যুবকেরা যেহেতু গুহার মধ্যে লুকিয়ে ছিল, তাই আমরা ধরে নিতে পারি সেখানে যথেষ্ট পরিমান আলো ছিল না যা তাদেরকে জাগিয়ে দিতে পারে। মহান আল্লাহ তাদের কানের উপরে নিদ্রার পর্দা ফেলে দিয়েছিলেন, ফলে তারা কানেও কোন শব্দ শুনতে পারছিল না। অর্থাৎ তাদের Reticular Activating System কে উত্তেজিত করার জন্য শব্দ বা আলো কোন কিছুর উপস্থিতিই গুহার মধ্যে ছিল না। ফলে গুহাবাসির দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় অচেতন অবস্থায় থাকতে পেরেছিল। 

এখানে মূল বিস্ময়কর বিষয়টি হচ্ছে ঘুম ভাংগার জন্য শব্দের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।  আর মেডিকেল সাইন্সের গবেষণা থেকে দেখা যায় মানুষের জাগ্রত অবস্থার জন্য মস্তিষ্কের Reticular Activating System নামক জটিল অংশটিকে শব্দ , আলো ইত্যাদির মাধ্যমে Stimulate করলে তবেই মানুষ জাগ্রত হতে পারে। 

মস্তিষ্কের Reticular Activating System সম্পর্কে  আরো যানা যাবে নীচের লিংক থেকে-

https://www.verywellhealth.com/definition-of-reticular-activating-system-3015376

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »