ফেরাউনের লাশ এবং কুরআনের মুজিজা, কুরআনের ভবিষ্যৎবাণী

কুরআনে ফেরাউনের লাশ সংরক্ষণের ঘটনা

কুরআনে বর্ণিত ফেরাউনের দেহ সংরক্ষণ কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুজিজা। সূরা ইউনুস (১০:৯২)-এ বলা হয়েছে, ফেরাউন যখন বনী ইসরাইলীদের তাড়া করতে গিয়ে সমুদ্রে ডুবে মারা যায়, তখন আল্লাহ তাঁর দেহ সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। আয়াতটি বলছে-

সুতরাং আজ আমরা তোমার দেহটি রক্ষা করব যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। আর নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই আমাদের নিদর্শন সম্পর্কে অসচেতন ( সূরা ইউনুসঃ আয়াত ৯২)।

So today We will save you in body that you may be to those who succeed you a sign. And indeed, many among the people, of Our signs, are heedless.

আয়াতের نُنَجِّيْكَ শব্দের অর্থ  তোমাকে রক্ষা করব এবং بِبَدَنِكَ শব্দের অর্থ তোমার শরীরকে বা লাশকে।  কুরআনে বিষ্যৎবাণী করা হয়েছে যে , ফিরআউন সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার পর আল্লাহ তার দেহ সংরক্ষণ করবেন যাতে এটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি নিদর্শন হয়ে থাকে। কুরআনের এই ভবিষ্যৎ বাণীটি অত্যন্ত বিস্ময়কর ভাবে সত্যে পরিণত হয়েছে। ১৪০০ বছর আগে ফেরাউনের লাশ কোথায়-কিভাবে সংরক্ষিত আছে তা নিয়ে মানুষের কোন ধরনের ধারনাই ছিল না। ফেরাউনদের বেশীরভাগ লাশের সন্ধান পাওয়া গেছে ১৮০০ শতাব্দির শেষভাগে এবং ১৯০০ শতাব্দির শুরুর দিকে। রামেসেস দ্বিতীয় ছিলেন ফেরাউনদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ফেরাউন, যার মমি ১৮৮১ সালে আবিষ্কৃত হয়। ধারনা করা হয় মুসা (আঃ) এর সময়ে রামেসেস দ্বিতীয় এর শাষণ কাল চলছিল। কারণ ফেরাউনদের মধ্যে এই রামেসেস দ্বিতীয় এর রাজত্ব সবচেয়ে বেশী দিন টিকে ছিল। কুরআনের নির্দিষ্টভাবে কোন ফেরাউনের মান উল্লেখ করা হয় নি। কিন্তু কুরআনে এমন একজন ফেরাউনের দিকে ইংগিত করা হয়েছে যার রাজত্ব অন্তত ৪০ বছরের বেশী সময় ধরে টিকে ছিল। কারণ কুরআনে বলা হয়েছে ফেরাউনের গৃহে মুসা (আঃ) শিশুকাল থেকে লালিত-পালিত হয়েছিলেন এবং বড় হয়েছিলেন।  কুরআনের সূরা কাসাসের ১৪ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছ মুসা আঃ যখন পরিণত বয়সে উপনিত হন তখন আল্লাহ তাঁকে কে নব্যুয়াত দান করেন-

ফেরাউনের লাশ এবং কুরআনের মুজিজা ১

ছবিঃ রামেসেস দ্বিতীয় এর মমি।

 

যখন মূসা যৌবনে পদার্পন করলেন এবং পরিণত বয়স্ক হয়ে গেলেন, তখন আমি তাঁকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানদান করলাম। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। [সুরা কাসাস – ২৮:১৪]

পরিণত বয়স বলতে সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সকে বুঝায়। অর্থাৎ এরকম একটা বয়স পর্যন্ত মুসা আঃ ফেরাউনের গৃহে ছিলেন। ঘটনাক্রমে মুসা আঃ মিশরের এক ব্যাক্তিকে ভুলক্রমে হত্যা করেন এবং প্রাণ ভয়ে মিশর থেকে মাদইয়ানে পালিয়ে যান, সেখানে বিয়ে করেন এবং প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর অবস্থান করেন যার কথা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা কাসাস ২৮ঃ২৭)।

পিতা মূসাকে বললেন, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার চাকুরী করবে, যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ চাহেন তো তুমি আমাকে সৎকর্মপরায়ণ পাবে। [সুরা কাসাস – ২৮:২৭]

এর পর আল্লাহ মুসা আঃ কে মিশরে ফিরে গিয়ে ফেরাউনকে দাওয়াত দিতে আদেশ দান করেন, কাজেই এই সময়ে মুসা আঃ এর বয়স প্রায় ৪০ বছর হবার কথা।

এর মানে কুরআনে এমন একজন ফেরাউনের দিকে ইংগিত করা হয়েছে যার শাষণকাল ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে চলছিল। ফেরাউনদের শাষণকাল হিসাব করলে দেখা যায় রামেসেস দ্বিতীয় সবচেয়ে অধিক সময়, প্রায় ৬৬ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি জোরপূর্বক শ্রমিক নিয়োগ এবং বড় বড় রাজপ্রাসাদ নির্মান করতেন বলে বাইবেল থেকে যানা যায়। অন্যান্য ফেরাউনের শাষণকাল বিবেচনা করলে রামেসেস দ্বিতীয় – মুসা আঃ এর সময়ে ফেরাউন হিসেবে শাষণ করছিলেন বলে মনে হয়।

 

মিশরের বিভিন্ন মিউজিয়ামে ১৫ জন ফেরাউনের মমি সংরক্ষিত আছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

  • রামেসেস দ্বিতীয় (রামেসেস দ্য গ্রেট) – মিশরের অন্যতম শক্তিশালী ফেরাউন, তার মমি ১৮৮১ সালে আবিষ্কৃত হয় এবং বর্তমানে কায়রোর মিশরীয় জাদুঘরে রয়েছে।
  • তুতানখামুন (কিং টুট) – তার সম্পূর্ণ সমাধি ১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টার আবিষ্কার করেন এবং তার মমিও কায়রোতে রয়েছে।
  • সেটি প্রথম – রামেসেস দ্বিতীয়ের পিতা, তার মমি খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত এবং কায়রোতে রয়েছে।
  • মেরনেপতাহ – কিছু গবেষকদের মতে তিনি হতে পারেন এক্সোডাসের ফেরাউন, তার মমি ১৮৯৮ সালে পাওয়া যায় এবং কায়রোতে রয়েছে।

অর্থাৎ মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ বছর আগে বেশ কয়েকজন ফেরাউনের লাশের মমির সন্ধান পাওয়া যায়, যার মধ্যে রামেসেস দ্বিতীয় – এর মমিও আছে। অথচ কুরআনে ১৪০০ বছর ফেরাউনের লাশ একটা নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে, যা নিশ্চিত ভাবে কুরআনের মিরাকল এবং কুরআনের সত্যতার প্রমাণ।

 

Related post-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »