দুই সাগরের মাঝে লুকিয়ে থাকা অন্তরাল!

 
وَهُوَ الَّذِي مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هَذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَهَذَا مِلْحٌ أُجَاجٌ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَحِجْرًا مَّحْجُورًا
 
তিনিই সমান্তরালে দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, একটি সুমিষ্ট, তৃষ্ণা নিবারক ও  আরেকটি লোনা, বিস্বাদ; উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়, একটি দুর্ভেদ্য আড়াল। [সুরা ফুরকান – ২৫:৫৩]

And He is the One Who merges the two bodies of water: one fresh and palatable and the other salty and bitter, placing between them a barrier they cannot cross.

 পবিত্র কুরআনে বেশ কয়েকটি আয়াতে দুই সাগরের মাঝে ব্যবধান বা অন্তরায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আরবীতে (بَرْزَخًا) শব্দের অর্থ আড়াল বা অন্তরায়। বাস্তবেও পৃথিবীর বেশ কয়েকটি স্থানে পাশাপাশি প্রবাহিত সমুদ্রের পানির মাঝে স্পষ্ট ব্যবধান খুঁজে পাওয়া যায়। দেখা যায় পাশাপাশি প্রবাহিত হলেও দুই সমুদ্রের পানির রং এবং গঠন আলাদা এবং তারা একটি অন্যটির সাথে মিশে যাচ্ছে না। অর্থাৎ কোন একটা অদৃশ্য দেয়াল যেন কাজ করছে দুই সাগরের মাঝে।
 
 কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই ব্যবধান? এই ব্যবধানের  অন্যতম একটি প্রধান কারন হচ্ছে দুই সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা বা Salinity এর মধ্যে পার্থক্য। যাকে ইংরেজীতে বলা হয় Halocline। দেখা গেছে লবণাক্ততার পার্থ্যকের জন্য দুই সমুদ্রের পানির ঘনত্বও আলাদা হয়ে যায়। ফলে পাশাপাশি প্রবাহিত হলেও একটা লাইন বরাবর পানি আলাদা থাকে। আর এই লাইনটিকেই ইংরেজীতে Halocline বলা হয়। 
 
 বিস্ময়করভাবে সূরা ফুরকানের ৫৩ নাম্বার আয়াতের শুরুতেই পাশাপাশি প্রবাহিত  সাগরের পানির লবণাক্ততা বা Salinity এর পার্থক্যের কথা বলা হয়েছে- আরেকটি লোনা, বিস্বাদ; উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়, একটি দুর্ভেদ্য আড়াল ”  
এ ব্যাপারটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাথে পুরোপুরি মিলা যায়।
 
আটলান্টিক আর প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে স্পস্ট ব্যবধান চোখে পড়ে। গবেষণায় দেখা যায় এই দুই সাগরের পানির মধ্যে ঘণত্ব, লবণাক্ততা আর ষ্ণতার পার্থক্যের কারনে একটির পানি অন্যটির সাথে মিশতে পারে না। ভূমধ্যসাগর আর আটলান্টিক সাগরের পানির মধ্যেও এরকম পার্থক্য দেখা যায়।
                       দুই সাগরের মাঝে দেয়াল
 ১৪০০ বছর আগে নবী মুহাম্মদ (সা) এর পক্ষে এ ধরনের তথ্য যানা থাকা সম্ভব নয়। তাছাড়া এ ধরনের স্রোত শুধু আরব উপদ্বীপের চারপাশেই সম্পূর্ণ অনুপস্থিত নয় বরং ভূমধ্যসাগরীয় ও ভারতীয় অঞ্চলসমূহেও এ স্রোতের দেখা পাওয়া যায় না। সর্বপথম এ প্রকারের স্রোতধারা আবিষ্কৃত হয় ১৯৪২ সালে। বর্তমানে সেগুলিকে কৃত্রিম satellite- এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে।
 
নীচের চার্টে বিভিন্ন সমুদ্রের পানির লবণাক্ততার পার্থক্য দেখান হয়েছে।
 
       Quran mentioned sea water salinity difference
 এ সংক্রান্ত আরও কয়েকটি আয়াত,  সূরা আর রাহমানের আয়াত ১৯ থেকে ২১–

مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَا يَبْغِيَانِ فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক আড়াল, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। অতএব (হে মানব ও জ্বীন) তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? (৫৫ঃ১৯-২১)

 সূরা নামলের ৬১তম আয়াত –

أَمَّنْ جَعَلَ الْأَرْضَ قَرَارًا وَجَعَلَ خِلَالَهَا أَنْهَارًا وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا ۗ أَإِلَٰهٌ مَعَ اللَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

কে পৃথিবীকে করেছে আবাসযোগ্য এবং তার মধ্যে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা ? আর তাতে স্থাপন করেছেন সৃদৃঢ় পর্বতমালা এবং দুই সাগরের মাঝখানে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায় ? আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে ? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না। (২৭ঃ৬১)

এই ভিডিওটি দেখলে কুরআনের আয়াতের মিরাকুলাস নেচাররটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে

One thought on “দুই সাগরের মাঝে লুকিয়ে থাকা অন্তরাল!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »