পবিত্র কুরআনের সুরা আল-কামারের প্রথম দুই আয়াতে বলা হয়েছে: চন্দ্র বিভাজন
“কিয়ামত আসন্ন এবং চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।
তারা কোনো নিদর্শন সরাসরি দেখলেও মুখ ফিরিয়ে নেয়
এবং বলে, ‘এতো চিরাচরিত জাদু’।
প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর চাঁদ দিখন্ডনের ঘটনা একটি বিস্ময়কর মুজি’জা। চাঁদ দ্বি-খন্ডন চন্দ্র বিভাজন
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেনঃ মক্কাবাসীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে নবুওয়তের কোন নিদর্শন দেখতে চাইলে আল্লাহ তা’আলা চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় দেখিয়ে দিলেন। তারা হেরা পর্বতকে উভয় খণ্ডের মাঝখানে দেখতে পেল। [বুখারী: ৩৮৬৮, মুসলিম: ২৮০২]
চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হবার এই ঘটনা আমাদের অনেকেরই জানা। কিন্তু চন্দ্র দ্বিখণ্ডনের এই ঘটনার সাথে ভারতের একজন হিন্দু রাজার নাম জড়িয়ে আছে, সেটি হয়ত আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। সেই রাজার নামটি হচ্ছে ‘চক্রবর্তী চেরামান পেরুমল’। তিনি ছিলেন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত মালাবার রাজ্যের (বর্তমান কেরালা অঞ্চল) একজন রাজা যিনি আকাশে চাঁদ দুই টুকরো হয়ে যাওয়ার ওই অলৌকিক ঘটনাটি দেখেছিলেন। যখন তিনি জানতে পারেন যে আরব দেশে শেষ নবীর আবির্ভাব ঘটেছে ও রাসূল (সা.) ই চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করেছেন, তখন তিনি মক্কায় গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। চেরামানের নামে ভারতের কেরালা রাজ্যে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চন্দ্র বিভাজন
চক্রবর্তী চেরামান পেরুমল ছিলেন দক্ষিণ ভারতের ‘চেরা’ রাজবংশের রাজা। রাজার মূল ঘটনাটির বর্ণনা পাওয়া যায় ‘Qissat Shakarwati Farmad’ নামক আরবীভাষায় লিখিত ঐতিহাসিক পান্ডূলিপিতে (Manuscript)। Qissat Shakarwati Farmad এরাবিক কথাটির মানে হচ্ছে ‘ একজন মহান চেরা রাজার গল্প’ উক্ত পান্ডূলিপি কে রচনা করেছিলেন সেটি যানা যায় নি। তবে সেটি ভারতের কেরালা বা মালাবার অঞ্চলে লিখিত হয়েছিল এবং বর্তমানে ব্রিটিশ লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। চন্দ্র বিভাজনচন্দ্র বিভাজন
‘Qissat Shakarwati Farmad’ নামক পান্ডূলিপিতে লিখিত ঘটনাটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হল— চন্দ্র বিভাজন চন্দ্র বিভাজন
চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হবার এই ঘটনাটি ঘটেছিল মুহাম্মদ (সা) এর হিজরতের আগে মক্কায়। মুহাম্মদ (সা) নিজেকে নবী দাবী করলেও কুরায়শদের অধিকাংশ লোকজন সেটি মেনে নিতে চাইছিল না। আবু জেহেল মুহাম্মদ (সা) কে ইসলামের দিকে দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দেবার জন্য হুমকী দেতে লাগল। মক্কার কুরায়শরা মুহাম্মদ (সা) কি নিয়ে কি করা যায় এমন চিন্তা-ভাবনা করতে থাকল। অবশেষে তারা মদীনায় বসবাসরত হাবীব বিন মালিককে মুহাম্মদ সা এর বিষয়টি সুরাহা করার দায়িত্ব দিল। কারন হাবিব বিন মালিক ছিল বিভিন্ন ধর্মের কিতাব সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞ এবং বেশ ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী। আবু জেহেল আর মক্কার কুরায়শরা ভাবল এই হাবিব বিন মালিকই পারবে মুহাম্মদকে থামাতে। পরিকল্পনা মাফিক হাবিব বিন মালিক ঘোড়সওয়ার আর সৈন্য-সামন্ত সহ মক্কায় রওয়ানা হলেন।
ইতিমধ্যে জিবরাঈল (আঃ) মুহাম্মদ (সা) কে আগেই কুরায়শদের পরিকল্পনা জানিয়ে দিলেন এবং এও বলে দিলেন যে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হাবিব বিন মালিকের দাবী অনুযায়ী মুহাম্মদ (সা) চাঁদকে দুই ভাগ করার মুজিযা দেখাতে পারবেন।
হাবিব বিন মালিকের সাথে মুহাম্মদ (সা) এর দেখা হলে তিনি তাঁকে বললেন যে তিনি আসমানী কিতাবে শেষ জামানায় মুহাম্মদ নামের একজন নবীর আগমন ঘটবে এমন তথ্য পেয়েছেন। কিন্তু ইতিপূর্বে সব নবীই তাঁদের দাবীর পক্ষে মুজিজা দেখিয়েছে। কাজেই তিনি মুহাম্মদ সাঃ কে চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করে নবুয়তের দাবীর পক্ষে প্রমাণ দিতে বললেন। অতঃপর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) সব মানুষের সামনে আল্লাহর ইচ্ছায় চাঁদকে দুই ভাগ করে দেখালেন।
চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হবার এই ঘটনাটি ভারতবর্ষের একজন রাজা তার প্রাসাদের ছাদ থেকে দেখতে পান এবং বিস্ময়ে বিমূর হয়ে পড়েন। তিনি কবে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি একটি কাগজে লিখে রাখেন। এই বিষয়ে তাঁর সভাষদের জ্যোতিষীদের কাছ থেকেও তিনি তেমন কোন সদউত্তর পেলেন না। তিনি এক রাতে মুহাম্মদ (সা) কে স্বপ্নে দেখতে পান এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন।
রাজা অনেক দিন ধরেই বিষয়টি বিস্ময়ে বিমূর হয়ে ছিলেন। এ সময়ে একদল ইহুদী আর খৃষ্টান তাদের পরিবার সহ মক্কা থেকে ভারত বর্ষের আগমন করলে তিনি তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন – মক্কায় মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ নামের একজন লোক নিজেকে সমগ্র মানব জাতির নবী দাবী করছে। যিনি জাদু দেখিয়ে মানুষদেরকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করছেন। রাজা জানতে চাইলেন উক্ত নবী কি ধরনের জাদু দেখান, তখন তারা চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হবার বিষয়টি উল্লেখ করে। কিন্তু রাজা যখন বুঝতে পারলেন এরা আসলে মুহাম্মদের শত্রু, তখন তিনি তাঁর কথা গোপন রাখলেন।
এরও কয়েক বছর পর আরব থেকে একদল লোকের আগমন ঘটে যারা শ্রীলংকায় আদম (আঃ) পায়ের চিহ্ন দেখবার জন্য আগমন করেছিলেন। যাত্রাপথে তারা ভারতবর্ষে আগমন করেন। রাজা তাদেরকে রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ যানান এবং অনেক সম্মান আর আতিথিয়তা প্রদর্শন করেন। আরবদের সেই দলে একজন ছিলেন যার নাম শেখ জহির আল-দীন। রাজা আলাদা ভাবে তার কাছে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হবার এই ঘটনাটি উল্লেখ করে এ বিষয়ে যানতে চান।
পরবর্তীতে মুসলিমদের এই দলটির সাথে রাজা আরবের পথে যাত্রা করেন। তবে যাত্রার আগে তিনি তাঁর রাজ্যের দায়িত্ব আলাদা আলাদা করে কয়েকজনের মধ্যে ভাগ করে দেন। তিনি সাথে প্রচুর পরিমানে মূল্যবান পাথর, সোনা এবং রুপা উপহার হিসেবে নিয়ে নেন।
অবশেষে রাজার সাথে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর দেখা হয় এবং তিনি নবীজির কাছে শাহাদা পাঠ করেন। নবীজি রাজার নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন- “তাজ আল হিন্দি আল মালাবারী”। আরবে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। হাবিব বিন মালিক ও তাঁর পরিবারের কয়েকজন রাজার সাথে দেখা করে তাঁর সাথে ভারতবর্ষে এসে ইসলামের দাওয়াতের কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ঘটনাপ্রবাহে রাজা একসময় ভারতে ফেরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তাঁর সাথে হাবিব বিন মালিক এবং কয়েকজন সাহাবী সহযাত্রী হিসেবে ছিলেন। কিন্তু যাত্রা পথে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং বুঝতে পারেন তাঁর হয়ত ভারতে ফেরা হবে না। তিনি তাঁর সাথের সহযাত্রীদেরকে তাঁর মৃত্যুর কারনে ভারতে যাত্রা বাতিল না করবার জন্য অনুরোধ যানান। সিন্ধান্ত নেয়া হয় আরব প্রতিনিধিরা ভারতের ‘কালানকাল্লুর (Kalankallur)’ নামক স্থানে অথবা রাজার রাজ্যের অন্যকোন স্থানে আগমন করবেন। রাজা মৃত্যুর আগে তাঁর রাজ্যের রাজাদের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে যান।
পরবর্তীতে হাবিব বিন মালিক, তার ভাই এবং স্ত্রী- সন্তান সহ ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং তাঁরা ভারতের কালানকাল্লুর (Kalankallur)’ নামক স্থানের শাসকের কাছে রাজার লিখে যাওয়া চিঠি সমর্পণ করেন। কালানকাল্লুরের তৎকালীন শাসক তাঁদেরকে বসবাসের জন্য ঘর এবং কৃষিভূমি দান করেন।
ধীরে ধীরে আরব প্রতিনিধিরা মালাবারের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি মসজিদ নির্মান করেন। ‘Qissat Shakarwati Farmad’ নামক পান্ডূলিপিতে লিখিত এই ঘটনাটি শেষ হয় ভারতের ১০ টি শহরের নাম দিয়ে, যে শহরগুলোতে মসজিদ নির্মান করা হয়েছিল।
Qissat Shakarwati Farmad’ নামক পান্ডূলিপিতে লিখিত ঘটনাটি এখানেই শেষ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে আমেরিকার The Newark Museum of Art এ ভারতের মুঘল সম্রাজ্যের সময়ে আঁকা একজন রাজার ছবি পাওয়া যায় যিনি চাঁদ দ্বি-খন্ডনের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করছেন। ছবিটি মুঘল আমলে (১৫ থেকে ১৮ শতাব্দি) আঁকা এবং ইস্ট ইন্ডিয়ার কম্পানী বা বৃটিশ শাসন আমলে ভারত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই ছবিটি নিয়ে Scott Kugle এবং Roxani Margari নামের দুজন গবেষক গবেষণা করেছেন এবং তাঁরা ছবিটিকে চক্রবর্তী চেরামান পেরুমলের ছবি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন ভারতবর্ষের ইসলাম ধর্মের আগমনের সাথে চক্রবর্তী চেরামান পেরুমলের ঘটনার যোগসূত্র আছে।
The Newark Museum of Art এ ভারতের মুঘল সম্রাজ্যের সময়ে আঁকা রাজা চক্রবর্তী চেরামান পেরুমলের ছবি যিনি চাঁদ দ্বি-খন্ডনের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করছেন।
Scott Kugle এবং Roxani Margari রাজা চেরুমন পরিমলের এই ছবিটি উপর তাঁদের গবেষণা কর্ম নিয়ে একটি ভিডিও বানিয়েছেন, যেটি পাওয়া যাবে এখানে–
Scott Kugle এবং Roxani Margari তাঁদের গবেষণা কর্ম নিয়ে একটি ভিডিও বানিয়েছেন, যেটি পাওয়া যাবে এখানে–
ভারতীয় আরো কয়েকটি ঐতিহাসিক ডকুমেন্টে এই হিন্দু রাজার ইসলাম গ্রহণের ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন ‘ তোহফাত আল মুজাহিদীন‘ , ‘তারিখে ফেরেশ্তা‘ ইত্যাদি।
ভারতের কেরালাতে রাজার নামে ‘চেরামান পেরুমল মসজিদ’ খুঁজে পাওয়া যায় যেটি সম্ভবত ৬২৯ খৃষ্টাব্দে গল্পে উল্লেখিত আরব প্রতিনিধিরা Mahodayapuram নামক স্থানে নির্মান করেছিলেন। পুরাতন সেই মসজিদটির স্থানে নতুন নির্মিত মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে ‘চেরামান জুমা মসজিদ‘
৬২৯ খৃষ্টাব্দে নির্মিত ‘চেরামান পেরুমল মসজিদ’
Qissat Shakarwati Farmad’ এ বর্ণিত ঘটনাটির মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের ইসলাম ধর্মের আগমনের সাথে হিন্দু রাজার ইসলাম গ্রহনের ঘটনার যোগসূত্র খুজে পাওয়া যায়। পান্ডূলিপির এই ঘটনাটি সত্য হলে এটাও প্রমাণিত হয় যে ভারতবর্ষে ইসলামের আগমন ঘটেছিল স্বয়ং মহানবী (সা) এর সময়েই। অন্ততঃ ৬২৯ খৃষ্টাব্দে নির্মিত মসজিদের অস্তিত্ব সেটাই প্রমাণ করে।
I like this website.
Thank you brother Abdul Karim.
You can follow my facebook page- https://www.facebook.com/pg/quranmedicalscience/
My book about science in Quran- https://www.rokomari.com/book/221168/rohossomoy-quran
MashaAllah. very informative. JajakAllahu Khayer