আমরা জানি মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা ২৩ জোড়া বা ৪৬টি। মানুষের শুক্রাণুতে ২৩টি ক্রোমোজোম থাকে। আর অত্যন্ত অদ্ভুতভাবে পবিত্র কোরআনে ‘মানুষ’ , ‘শুক্রাণু’ এই শব্দগুলোর সাথে এই ২৩ এবং ৪৬ সংখ্যা দুটির একটি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন ধরুন, কোরআনের কোন একটি আয়াতে ‘মানুষ’ বা ‘আল-ইনসান’ শব্দটি আছে, উক্ত আয়াতে যদি আমরা অক্ষর সংখ্যা গণনা করি তাহলে অক্ষর সংখ্যার মাধ্যমে ২৩ অথবা ৪৬ সংখ্যাটির সাথে ‘মানুষ’ শব্দের সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়। আবার মানুষের শুক্রাণুতে ২৩ টি ক্রোমোজোম থাকে, কোরআনের অনেক আয়াতেই অক্ষর গণনা করলে ‘শুক্রাণু’ শব্দের সাথে ২৩ সংখ্যটির সংযোগ পাওয়া যায়। এমন ঘটনা কিন্তু একবার, দুবার কাকতালীয়ভাবে ঘটতে পারে। কিন্তু কোরআনের ক্ষেত্রে আমরা দেখব এই ব্যাপারটি অসংখ্যবার ঘটছে। আর যেহেতু এমনটি বার বার হচ্ছে তাই হতে পারে এটা পবিত্র কোরআনের মিরাকলের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়।
মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা
২৩ জোড়া বা ৪৬ টি
এখন আমরা দেখব পবিত্র কোরআনে এই মিরাকল কত অসংখ্যবার ঘটছে–
১। সুরা যিলযাল কোরানের ৯৯ নং সুরা। এই সুরার তৃতীয় আয়াতে মানুষ (الْإِنسَانِ) শব্দটি আছে। প্রথম আয়াত থেকে অক্ষর গণনা করলে ইনসান শব্দের মধ্যে ৪৬ সংখ্যাটি পাওয়া যায়। মানুষের ক্রোমোজোম হচ্ছে ৪৬টি। মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা
যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে, যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে। এবং মানুষ বলবে, এর কি হল ? [ সুরা যিলযাল ৯৯ ]
২। আবার সুরা আর-রহমানের তৃতীয় আয়াতে ‘মানুষ’ শব্দটি আছে। সুরার প্রথম আয়াত থেকে অক্ষর গুনে আসলে ‘মানুষ’ শব্দের মধ্যে ২৩ সংখ্যাটি পাওয়া যায়। মানুষের ক্রোমোজোম ২৩ জোড়া। মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা
করুনাময় আল্লাহ। শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, [ সুরা আর-রহমান ৫৫:৩ ]
৩। সুরা আর-রহমানের ১৪ নং আয়াতেও ‘মানুষ’ শব্দটি আছে। আমরা যদি ১৩ নং আয়াতের শুরু থেকে অক্ষর গুনে আসি তাহলে দেখব ১৪নং আয়াতের ‘মানুষ’ শব্দের আগ পর্যন্ত ঠিক ২৩ টি অক্ষর আছে।
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে? তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। [ সুরা আর-রহমান ৫৫: ১৩ -১৪ ]
৪। সুরা তীন (সুরা ৯৫) এর ৪র্থ আয়াতে ‘মানুষ’ শব্দ আছে। সুরার প্রথম থেকে ৪র্থ আয়াতের ‘মানুষ’ শব্দটি পর্যন্ত অক্ষর গুণে আসলে দেখা যায় (لِلْإِنسَانِ) বা ‘মানুষ’ শব্দের আগ পর্যন্ত ঠিক ৪৬ টি হরফ আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ৩য় আয়াতের শুরু থেকে অক্ষর গুনলে ৪র্থ আয়াতের ‘মানুষ’ শব্দের আগ পর্যন্ত ঠিক ২৩টি হরফ পাওয়া যায়। মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা
শপথ আঞ্জীর (ডুমুর) ও যয়তুনের, এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের, এবং এই নিরাপদ নগরীর। আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে। [ সুরা তীন ৯৫:১-৪ ]
৫। পবিত্র কোরানের সূরা আন-নিসার ২৮ নং আয়াতে মানুষ (الْإِنسَانِ) শব্দটি এসেছে। আল-ইনসান বা মানুষ শব্দের প্রথম অক্ষর আলিফ (ا) ঠিক ২৩ তম স্থানে আছে।
আল্লাহ তোমাদের বোঝা হালকা করতে চান। মানুষ দুর্বল সৃজিত হয়েছে। [ সুরা নিসা ৪:২৮ ]
৬। সুরা ইব্রাহীম আয়াত ৩৪ (১৪ : ৩৪)। আয়াতের প্রথম থেকে ‘মানুষ’ শব্দটি পর্যন্ত অক্ষর গুণে আসলে দেখা যায় (لِلْإِنسَانِ) বা ‘মানুষ’ শব্দের প্রথম হরফ আলিফ’ ঠিক ৪৬ তম স্থানে আছে।
যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ। [ সুরা ইবরাহীম ১৪:৩৪ ]
০৭। সুরা যুখরুফ ৪৩ আয়াত ১৫ (৪৩ : ১৫)। আয়াতের প্রথম থেকে ‘মানুষ’ শব্দটি পর্যন্ত অক্ষর গুণে আসলে দেখা যায় (لِلْإِنسَانِ) বা ‘মানুষ’ শব্দের লাম হরফ পর্যন্ত ঠিক ২৩ টি হরফ আছে।
তারা আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে আল্লাহর অংশ স্থির করেছে। বাস্তবিক মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ।[ সুরা যূখরুফ ৪৩:১৫ ]
০৮। আবার আমরা যদি সূরা ইয়াসিন আয়াত ৭৭ নং আয়াত দেখি তাহলে দেখব সেখানে আল্লাহ বলেছেন-
মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতঃপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী। [ সুরা ইয়া-সীন ৩৬:৭৭ ]
এই আয়াতে نُّطۡفَةٍ۬ বা নুতফাহ শব্দটির অর্থ হচ্ছে বীর্য বা স্পার্ম আর স্পার্ম শব্দটি নুন ن ঠিক ২৩তম স্থানে আছে। আর স্পার্মে ঠিক ২৩টি ক্রোমোজোম থাকে।
০৯। সুরা ফাতির এর ১১ নং আয়াতের (৩৫ : ১১) ‘ স্পার্ম বা বীর্য’ শব্দটি আছে। এই আয়াতের শুরু থেকে ‘স্পার্ম’ শব্দটি পর্যন্ত অক্ষর গুণে আসলে (نُّطْفَةٍ) এর ‘ফা’ হরফ ২৩ তম স্থানে পাওয়া যায়।
আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, তারপর করেছেন তোমাদেরকে যুগল। কোন নারী গর্ভধারণ করে না এবং সন্তান প্রসব করে না; কিন্তু তাঁর জ্ঞাতসারে। কোন বয়স্ক ব্যক্তি বয়স পায় না। এবং তার বয়স হ্রাস পায় না; কিন্তু তা লিখিত আছে কিতাবে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। [ সুরা ফাতির ৩৫:১১ ]
১০। সুরা মু’মিন এর ৬৭ নং আয়াতের (৪০ : ৬৭) ‘ স্পার্ম বা বীর্য’ শব্দটি আছে। এই আয়াতের শুরু থেকে ‘স্পার্ম’ শব্দটি পর্যন্ত অক্ষর গুণে আসলে (نُّطْفَةٍ) এর মধ্যেই ২৩ তম হরফ পাওয়া যায়।
তিনি তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা, অতঃপর শুক্রবিন্দু দ্বারা, অতঃপর জমাট রক্ত দ্বারা, অতঃপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে, অতঃপর তোমরা যৌবনে পদর্পণ কর, অতঃপর বার্ধক্যে উপনীত হও। তোমাদের কারও কারও এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং তোমরা নির্ধারিত কালে পৌঁছ এবং তোমরা যাতে অনুধাবন কর। [ সুরা মু’মিন ৪০:৬৭ ]
আমরা দেখতে পেলাম মানুষের ক্রোমোজোম নাম্বারে সাথে মিল রেখে ‘মানুষ’ , স্পার্ম শব্দগুলোকে কতটা বিস্ময়করভাবে আয়াতের ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে কয়েকটি মাত্র উদাহরণ দেয়া হল। কোরআনে এরকম অসংখ্য আয়াত খুঁজে পাওয়া যায়। কোরআন কেবলমাত্র মহান স্রষ্ঠা আল্লাহর পক্ষ থেকেই নাযীল হয়েছে তা কিন্তু নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।
Related videos-
2 thoughts on “কুরআনের আয়াতে মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা!!”