পবিত্র কুরআন এক মহাবিস্ময়কর গ্রন্থ যার প্রতিটি পাতায় অসংখ্য রহস্য লুকিয়ে আছে। কুরআন যে আসলেই মহান আল্লাহর বাণী তার সুনিশ্চিত প্রমাণও লুকিয়ে আছে কুরআনের মধ্যে। এই আর্টিকেলটিতে কুরআন যে আল্লাহর বাণী তার পক্ষে শক্তিশালী প্রমাণপত্র উপস্থাপন করা হবে। আগের একটি আর্টিকেলে আমরা দেখেছিলাম কুরআনের ভেতরে মানুষের ক্রোমোজোম নাম্বারের দিকে ইংগিত করা হয়েছে। আজকে আমরা দেখব কুরআনে উল্লেখিত বিভিন্ন প্রাণীর ক্রোমোজোম নাম্বারের দিকে কিভাবে ইংগিত করা হয়েছে–
বানর / শিম্পাঞ্জীর ক্রোমোজোম সংখ্যার কোড প্রাণীর ক্রোমোজোম সংখ্যা
বানর/ শিম্পাঞ্জীর ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৮টি। আরবীতে قِرَدَةً (Qiradatan) মানে বানর।
১/ পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ৬৫ নং আয়াতে (২:৬৫) সর্বপ্রথম বানরের কথা বলা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই আয়াতে قِرَدَةً (Qiradatan) বা বানর শব্দটির শেষ অক্ষর সহ মোট ৪৮টি হরফ আছে যা বানরের ক্রোমোজোম নাম্বারের সমান.
তোমরা তাদেরকে ভালরূপে জেনেছ, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘণ করেছিল। আমি বলেছিলামঃ তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।
২/ পবিত্র কুরআনে এরপর সূরা আল মায়েদার ৬০নং আয়াতে ( ৫ :৬০) বানরের কথা বলা হয়েছে। এই আয়াতের শেষ থেকে قِرَدَةَ বা বানর শব্দটি পর্যন্ত ৪৮টি হরফ আছে আর ৪৮ হচ্ছে বানরের ক্রোমোজোম নাম্বার।
বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি, তাদের মধ্যে কার মন্দ প্রতিফল রয়েছে আল্লাহর কাছে? যাদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, যাদের প্রতি তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে বানর ও শুকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন এবং যারা শয়তানের আরাধনা করেছে, তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকেও অনেক দূর।
মৌমাছির ক্রোমোজোম সংখ্যার কোড প্রাণীর ক্রোমোজোম সংখ্যা
- মৌচাকে তিন ধরনের মৌমাছি থাকে । রাণী মৌমাছি ,পুরুষ মৌমাছি এবং শ্রমিক মৌমাছি।পুরুষ মৌমাছির ক্রোমোজোম সংখ্যা ১৬ টি। রাণী আর শ্রমিক মৌমাছির ক্রোমোজোম সংখ্যা ৩২টি। পুরুষ মৌমাছি অনিষিক্ত ডিম ( Unfertilized egg) থেকে জন্মে বলে তার ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্যাপ্লয়েড বা ১৬টি।
- আরবীতে মৌমাছিকে نَّحۡل (Nahl) বলা হয়।
১/ পবিত্র কুরআনের ১৬ নং সূরার নাম ‘নাহল’ বা ‘মৌমাছি’ যা মৌমাছির হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান।
২/ নাহল সূরায় ১২৮টি আয়াত আছে এবং ১২৮ সংখ্যাটি ১৬ আর ৩২ এই দুটি সংখ্যা দ্বারাই বিভাজ্য।
৩/ এই সূরার ৬৮নং আয়াতে সর্ব প্রথম মৌমাছির কথা বলা হয়েছে । এই আয়াতে নাহল বা মৌমাছি শব্দটির শেষ অক্ষরটি ঠিক ১৬ তম স্থানে আছে।
আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতগাহ্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর,
৪/ আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে ৬৮নং আয়াতে পুনরাবৃত্তি ছাড়া হরফের ( Non repeated letters) সংখ্যা ১৬টি।
ঘোড়ার ক্রোমোজোম সংখ্যার কোড
ঘোড়ার ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা ৬৪। হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা ৩২ টি। আরবীতে ঘোড়াকে خَيْلِ (Khayl) বলা হয়।
১/ পবিত্র কুরআনের সূরা আল ইমরানের ১৪নং আয়াতে ( ৩:১৪) প্রথম ঘোড়ার কথা বলা হয়েছে। এই আয়াতে خَيْلِ ঘোড়া শব্দটির প্রথম অক্ষর পর্যন্ত ঠিক ৬৪ টি অক্ষর আছে যা ঘোড়ার ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান।
মানব কূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃতস্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তু সামগ্রী।এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্তু।আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়।
২/ এরপর ঘোড়ার কথা বলা হয়েছে সূরা আল আনফালের ৬০ নং আয়াতে (৮: ৬০)। এই আয়াতে خَيْلِ বা ঘোড়া শব্দটি পর্যন্ত প্রথম থেকে মোট ৩২টি হরফ আছে যা ঘোড়ার হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান।
আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জাননা; আল্লাহ তাদের কে চেনেন।
গাধার ক্রোমোজোম সংখ্যার কোড
গাধার ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম নাম্বার ৬২ । আরবীতে গাধাকে حَمِير (Himar) বলা হয়।
পবিত্র কুরআনের ৬২ নং সূরার (গাধার ক্রোমোজোম নাম্বার) ৫ নং আয়াতে গাধার কথা বলা হয়েছে। আর গাধা বাحَمِير শব্দটির পর থেকে ঠিক ৬২ টি হরফ আছে।
যাদেরকে তওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা, যে পুস্তক বহন করে, যারা আল্লাহর আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলে, তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।
কুকুরের ক্রোমোজোম সংখ্যার কোড
কুকুরের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম নাম্বার ৭৮টি। হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম ৩৯।
কুকুরকে আরবীতে – كَلۡبُ বা كَلْبُهُمْ (Kalbi বা Kalbuhum)
১/ সূরা আল আরাফের ১৭৬ নং আয়াতে (৭: ১৭৬) প্রথম কুকুরের কথা বলা হয়েছে। আমরা যদি শেষ থেকে গুনতে থাকি তাহলে দেখব বা কুকুর শব্দটি সহ ঠিক ৭৮টি হরফ আছে যা কুকুরের ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান।
অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা করে।
৩/ সূরা কাহাফ ২২ নং আয়াতে (১৮: ২২) কুকুরের কথা বলা আছে তিনবার। দ্বিতীয়বার কুকুর পর্যন্ত প্রথম থেকে ঠিক ৩৯টি হরফ আছে যা কুকুরের হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান।
অজ্ঞাত বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এখন তারা বলবেঃ তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ জন। তাদের ছষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবেঃ তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুনঃ আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করবেন না।
ঊটের ক্রোমোজোম সংখ্যার কোড
ঊটের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম নাম্বার ৭৪ এবং হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা ৩৭। ঊটকে আরবীতে جَمَلُ (Jamalu) বলা হয় আর ঊষ্ট্রীকে نَاقَةُ (Nakatu) বলা হয়।
১/ ঊটের কথা প্রথম পবিত্র কুরআনের ৭ নং সূরার ৪০ নং আয়াতে বলা হয়েছে (সূরা আরাফ ৪০)। এই আয়াতে جَمَلُ (Jamalu) শব্দটি ঠিক প্রথম থেকে অক্ষর গননা করলে দেখা যাবে ঠিক ৭৪ তম স্থানে আছে
নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং এগুলো থেকে অহংকার করেছে, তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উম্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আমি এমনিভাবে পাপীদেরকে শাস্তি প্রদান করি।
৩/ ঊষ্ট্রির نَاقَةُ কথা এরপর পবিত্র কুরআনের ১৭ নং সূরার ৫৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে (সূরা বনী ইসরাঈল বা ইসরা, আয়াত ৫৯) আর ঊষ্টী বা نَاقَةُ সহ শব্দটি শেষ থেকে অক্ষর গুনে আসলে ঠিক ৩৭ তম অবস্থানে আছে যা ঊষ্ট্রীর হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান।
পূর্ববর্তীগণ কতৃêক নিদর্শন অস্বীকার করার ফলেই আমাকে নিদর্শনাবলী প্রেরণ থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। আমি তাদেরকে বোঝাবার জন্যে সামুদকে উষ্ট্রী দিয়েছিলাম। অতঃপর তারা তার প্রতি জুলুম করেছিল। আমি ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশেই নিদর্শন প্রেরণ করি।
————————————————
অর্থাৎ কুরআনে যে বিভিন্ন প্রাণীর ক্রোমোজোম নাম্বারের ইংগিত করা হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। কারন কাকতলিয় ভাবে ক্রোমোজোম নাম্বার একবার দুবার মিলতে পারে কিন্তু বার বার নয়। অথচ কুরআনে এমন ঘটনাটি ঘটছে বার বার। কাজেই কুরআন যে আল্লাহর বাণী এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই।
Related post–
- কুরআনের আয়াতে মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা
- সূরা কিয়ামতে জেনেটিক কোড
- আল ইনসান সূরায় লুকিয়ে থাকা মানুষের জেনেটিক কোড
Related video–
আসসালামু আলাইকুম।আমি মাকড়সার ব্যাপারটি জানতে চাই।ক্রোমোজোম নিয়ে।
অলাইকুমুসসালাম
মাকড়শার অনেক ধরনের স্পেসিস আছে, একেক স্পেসিসের ক্রোমোজোম নাম্বার একেক রকম।
তবে মাকড়শার ক্রোমোজোম নাম্বার সাধারণত ২২ থেকে ৩০ এর মধ্যে হয়ে থাকে।
সূরা আনকাবুত হচ্ছে কুরানের ২৯ নাম্বার সূরা।
এই সূরার ৪১ নাম্বার আয়াতে মাকড়শার কথা দুইবার বলা হয়েছে। প্রথম ‘আনাকাবুত ‘ শব্দের শেষ থেকে ২য় ‘আনকাবুত’ শব্দের মাঝে ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ ইত্যাদি সংখ্যাগুলো পাওয়া যায়। হতে পারে এভাবে মাকড়শার ক্রোমোজোম নাম্বারের দিকে ইংগিত করা হয়েছে।
লিংক- chrome-extension://efaidnbmnnnibpcajpcglclefindmkaj/https://www.eje.cz/pdfs/eje/2011/01/01.pdf
বই- https://www.rokomari.com/book/221168/rohossomoy-quran
ফেসবুক- https://www.facebook.com/quranmedicalscience